বৃহস্পতিবার, 22 মে 2025
MENU
daily-fulki

সাভারে বাবার মোবাইল ফোনেই তাঁকে খুনের ভিডিও করেন সেই তরুণী

স্টাফ রিপোর্টার : ঘটনাটি সাভার পৌর এলাকার মজিদপুরের। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নিজ বাসায় ওই তরুণী তাঁর বাবা আব্দুস সাত্তারকে (৫৬) ছুরিকাঘাতে খুন করেন বলে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোনকল করে জানান। এ সময় ওই তরুণী নিজেকে আটকের অনুরোধ করেন। খবর পেয়ে সকালে সাভার থানা-পুলিশ তাঁকে আটকের পাশাপাশি তাঁর বাবার লাশ উদ্ধার করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি ছুরি হাতে তাঁর বাবার লাশের পাশে বসে আছেন। আর মৃত বাবার উদ্দেশে বলছেন, ‘মা মরার পর তোরে আমি মায়ের জায়গা দিছিলাম। কিন্তু তুই আমার কাছ থেকে সব কাইড়া নিছস। কাউরে এত বেশি যন্ত্রণা দিতে নাই। যাতে সে মারতে বাধ্য হয়।’

 

ছুরি দেখিয়ে তরুণী বলেন, ‘তুই কিনছিলি না ছুরিটা? দেখ, আইজকা হেই ছুরি দিয়াই তোরে মাইরা ফালাইলাম। ওরে আমার বাপ রে! তোরে বাপ কমু না, ধর্ষক কমু। আমি ধর্ষকরে মারছি। এখন যদি কেউ কয়, আমি খারাপ, তাইলে খারাপ। আর যদি মনে হয়, আমি ঠিক করছি, তাইলে আই অ্যাম রাইট।’

ভিডিওতে মেয়েটিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘তুই আমারে কইছস, আমি জারজ। তারপরও সব হজম করছি। কিচ্ছু কই নাই তোরে। কোনো দিন ভাবি নাই, নিজ হাতে তোরে মারব আমি।’

তরুণী বলেন, ‘খুব শখ না তোর। মেয়েরে রেইপ (ধর্ষণ) করার সময় ভিডিও বানাস তুই। নে, আইজ ভিডিও বানা। যে ফোন দিয়া আমারে ধর্ষণের ভিডিও করছস, তোরে মাইরা হেই ফোন দিয়াই আজ ভিডিও করতাছি।’

একপর্যায়ে অনেকটা উত্তেজিত হয়ে মেয়েটি বলতে থাকেন, ‘কম জ্বালাস নাই ওই ভিডিও (মেয়েকে ধর্ষণের ভিডিও) দিয়া। ভাইরাল কইরা দিবি, এই করবি, ওই করবি। এখন কর। আহা রে তোর বডি, রক্তে লাল হয়ে গেছে। কইছিলাম, তোর রক্ত দিয়া গোসল করব।’

ভিডিওতে তরুণীকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রত্যেক মানুষরে কইছি। কইতে কইতে ক্লান্ত হইয়া গেছি। কিন্তু কেউ একবারের জন্যও আমাকে হেল্প করতে আসে নাই। ধর্ষণের শাস্তি তো মৃত্যুই হয়। এইটাও ভুইলা গেছিলি। এখন আমারে সবাই খারাপ বলবে। পুরো দুনিয়া আমাকে খারাপ বলবে। কিন্তু কেয়ার করি না। কারণ, আমি যখন ধর্ষণের শিকার হইছি, তখন কেউ আমারে বাঁচাইতে আসে নাই।’

সবশেষে হাসতে হাসতে তরুণীকে বলতে শোনা যায়, ‘জোস লাগতাছে। বহু বছর পর মনে হইতাছে, শান্তি মিলছে আমার।’

‘বাবার হাতে মেয়ে ধর্ষণ ও মেয়ের হাতে বাবা খুনের’ বিষয়টি নিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক ও মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ ফারুক হোসাইনের সঙ্গে কথা হয়।

অধ্যাপক মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একদিকে ধর্ষণের শিকার হয়ে বাবার প্রতি মেয়েটির তীব্র ঘৃণা জন্ম নেয়। তারপর আবার বিচার না পেয়ে তিনি চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় বাবার ক্রমাগত মানসিক চাপ তাঁর জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তোলে। এসব থেকে তাঁর মৌলিক বৈশিষ্ট্যের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাবাকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

ঢাকার (সাভার সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বলেন, মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বাবার কাছে ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে হতে হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন; যার পরিণতি এই হত্যাকাণ্ড।


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত